ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: মাগুরার দুই আসনে সরব বিএনপি, গ্রুপিং ও মনোনয়ন দৌড়ে উত্তপ্ত রাজনীতি

Khoborbartanews
By -
0

 


খবর বার্তা প্রতিবেদক :


মাগুরা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাগুরার দুটি সংসদীয় আসন—মাগুরা-১ ও মাগুরা-২—ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যস্ততা, দলীয় অভ্যন্তরে গ্রুপিং এবং ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি ঘিরে ভোটের মাঠে জমে উঠেছে নানা হিসাব-নিকাশ।


দলীয় কোন্দল, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা 

মাগুরা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় থাকায় জেলার দুইটি আসনেই ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন। পদ-পদবি, প্রভাব বিস্তার এবং মনোনয়নপ্রাপ্তির দৌড়ে নেতাদের মাঝে গ্রুপিং এখন স্পষ্ট। এতে দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় কেন্দ্রীয় কমিটি ইতোমধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কৃতরা দাবি করছেন, তারা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বলি হয়েছেন।


মাগুরা-১ আসন: পুরনো মুখ বনাম নতুন চ্যালেঞ্জার


সদরের ৯টি ইউনিয়ন এবং শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৭৬ জন। ২০১৮ সালে কারাবন্দি অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া মনোয়ার হোসেন খান এবারও মনোনয়নের দৌড়ে অন্যতম। বর্তমানে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে তিনি দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন।


তবে মনোয়ারের পাশাপাশি মনোনয়ন চাইছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর, প্রয়াত মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মজিদ উল হকের কন্যা ডা. সিমিন এ মজিদ, ডা. আলিমুজ্জামান এবং ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান।


আলি আহমেদ ও আহসান হাবিব কিশোর দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। মনোয়ার মাঠে শোডাউন অব্যাহত রাখলেও বাকিরা মূলত সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রচারণামূলক ব্যানার ফেস্টুনে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।


এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর হয়ে নির্বাচনে লড়বেন জেলার সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুল মতিন। তিনি গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার আরও সংগঠিতভাবে মাঠে নেমেছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা নাজিরুল ইসলাম এবং গণফোরামের ডা. মিজানুর রহমানও এলাকাভিত্তিক প্রচারণা জোরদার করেছেন।


মাগুরা-২ আসন: অভিজ্ঞ বনাম উদীয়মান নেতৃত্বের লড়াই


মহম্মদপুর, শালিখা এবং সদরের চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ আসনের ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজার ৫৫৯ জন। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, এবং যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন।


নিতাই রায় ঢাকায় বসবাস করলেও নির্বাচনী এলাকায় তার অবস্থান নিয়মিত নয়, ফলে এলাকায় ততটা জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারছেন না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অপরদিকে কাজী কামাল ও নয়ন যৌথভাবে দলের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখায় সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ অনেকটা তাদের দখলে।


জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এ বি বাকের মাঠে সক্রিয় থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতা ড. আলি আফজাল বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। স্থানীয় পর্যায়ে তার আয়োজিত ক্রীড়া ও শিক্ষা কার্যক্রম সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।


ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি মোস্তফা কামাল দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। তিনিও ধারাবাহিকভাবে ভোটারদের সঙ্গে গণসংযোগ করছেন।


ভোটারদের চাওয়া ও প্রশাসনের প্রস্তুতি


মাগুরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসন প্রস্তুত থাকলেও সাধারণ ভোটাররা চায়—সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।


তারা দুর্নীতিমুক্ত, সৎ, শিক্ষিত এবং মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন প্রার্থীকে ভোট দিতে আগ্রহী বলে জানান স্থানীয়রা।


Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)