তিস্তায় পানি কমলেও বেড়েছে ভাঙন: দুর্ভোগে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়বাসী

Khoborbartanews
By -
0

 



নিজস্ব প্রতিবেদক, লালমনিরহাট:

লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এতে তীব্র দুর্ভোগে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের হাজারো মানুষ। ঘরবাড়ি থেকে পানি নামলেও কাদা, ময়লা এবং ভাঙনের আতঙ্কে স্বস্তিতে নেই তারা।

সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার। এটি বিপৎসীমার (৫২.১৫ মিটার) ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর পানি কমলেও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভোটমারীসহ বিভিন্ন এলাকায়।

এর আগে রোববার সারাদিন ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যার ফলে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল কয়েক হাজার পরিবার।

মুক্তি পানিবন্দিত্ব থেকে, বিপদ বাড়ে ভাঙনের

বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় অনেকেই ঘরবাড়িতে ফিরেছেন, তবে ঘর সংস্কার ও দৈনন্দিন কাজ নিয়ে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। পানির স্রোতে আমন ধানের ক্ষেত, মাছের পুকুর, পাটের জাগ নষ্ট হয়েছে। টিউবওয়েল, টয়লেট ডুবে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নারী ও শিশু।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর মূলস্রোতের গতিপথ রুদ্ধ করে চরাঞ্চলে সোলার প্যানেল স্থাপন করেছে ইন্ট্রাকো নামক একটি কোম্পানি। এতে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে ভাঙনের সৃষ্টি করছে।

দক্ষিণ ভোটমারী গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস আলী বলেন, “সোলার কোম্পানি তাদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করলেও, আমাদের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে যাচ্ছে। কোম্পানি বেড়িবাঁধ দেয়নি। বরং নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে আমাদের বুকের ওপর দিয়ে ব্যবসা করছে।”

একই অভিযোগ করেন সমির উদ্দিন নামের এক কৃষক। তিনি বলেন, “ফসলের জমি ও বাড়ি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হচ্ছি, আর কোম্পানি করছে লাভের ব্যবসা। ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”

ভাঙনের কবলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা

গত দুই দিনে দক্ষিণ ভোটমারী এলাকায় পাঁচটি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকির মুখে রয়েছে শতাধিক বাড়ি, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক।

ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বলেন, “ইউএনও’র সহযোগিতায় ৫০০ জিও ব্যাগ পেয়েছি। স্থানীয়রা তাতে বালু ভরে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। তবে দ্রুত আরও জিও ব্যাগ দরকার, না হলে পুরো এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।”

প্রশাসনের অবস্থান ও পদক্ষেপ

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, “সোলার প্যানেল স্থাপনার কারণে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হয়েছে। আমরা ভাঙন রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার জানান, “তিস্তার পানি কমলেও ভাঙনের আশঙ্কা বেড়েছে। ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ বরাদ্দ পেয়েছি। আরও প্রয়োজন হলে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তিস্তাপাড়ের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”



Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)