ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:
নয় বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসাহ ও উত্তেজনা। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে ভিপি (সহ-সভাপতি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৮ জন প্রার্থী। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হয়েছে। এবারের নির্বাচনে নয়টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে, সঙ্গে আছেন একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীও।
বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে নির্বাচনী হাওয়ায় এখন সরব আলোচনা কয়েকজন ভিপি প্রার্থীকে ঘিরে। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন, সংগঠন এবং সামাজিক মাধ্যমে তাদের সক্রিয়তা ও নেতৃত্বগুণে ইতোমধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছেন।
আলোচনার শীর্ষে যাঁরা
আব্দুল কাদের
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’-এর ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের, যিনি এক সময় ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০২২ সালে আবরার ফাহাদের স্মরণসভা আয়োজনের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া এই নেতা জেল থেকে ফিরে নেতৃত্বে ফিরে আসেন। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাগরিক পার্টির নেতাদের সরাসরি সমর্থন তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।
আবিদুল ইসলাম খান
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (ছাত্রদল)-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান তার বক্তব্য ও তৃণমূলের সংযোগের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’—জুলাই অভ্যুত্থানের সময় তার দেওয়া এই বক্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়। পরে অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেন ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’ নামক বই। রাজনৈতিক ভিত্তি ও সাংগঠনিক শক্তি তাকে এগিয়ে রাখছে।
আবু সাদিক (সাদিক কায়েম)
ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক, যিনি সাদিক কায়েম নামে পরিচিত, তিনিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অভ্যুত্থানের সময় নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কাজ করেন তিনি। হলে হলে ছাত্রশিবিরের সংগঠনিক শক্তি এবং অনলাইন প্রচারণায় সাদিকের উপস্থিতি তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
বিন ইয়ামীন মোল্লা
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা ২০১৯ সালে ডাকসুর নির্বাচনে বিজয়ী সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের সংগঠন থেকেই উঠে এসেছেন। আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় অংশগ্রহণের কারণে নির্যাতন ও দীর্ঘ কারাবরণ তার আন্দোলনমুখী পরিচিতি গড়ে তোলে। পিএসসি সংস্কার, গণরুম ইস্যুতে তার অবস্থান তাকে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
উমামা ফাতেমা
নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় এক নাম উমামা ফাতেমা, যিনি জুলাই অভ্যুত্থানে কবি সুফিয়া কামাল হলের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র হন। নারী নেতৃত্বে তার অবস্থান এবং সংগঠনের দক্ষতায় তিনি এবার নির্বাচনে একটি শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত।
জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ
এক সময় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ গড়ে তুলেন। ফিলিস্তিন ইস্যু ও হিজাব নিয়ে আন্দোলনে সরব ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বিকল্প রাজনীতির বার্তা দিয়ে তিনি প্রার্থিতার ময়দানে রয়েছেন আলোচনায়।
নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন। দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবারের নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক প্রভাব নয়, বরং নেতৃত্ব, আন্দোলন ও আদর্শের ভিত্তিতেও মূল্যায়িত হতে পারে বলে বিশ্লেষণ করছেন অনেকে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন হলে, ডিপার্টমেন্টে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। সব প্রার্থীই শিক্ষার্থীদের মাঝে গিয়ে তাদের প্যানেল ও কর্মসূচি তুলে ধরছেন।
শেষ কথা
নয়টি প্যানেল, ৪৮ জন ভিপি প্রার্থী—সবমিলিয়ে এবারের ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, ঘটনাবহুল এবং ইতিহাসগড়ার সম্ভাবনাময়। কোন নেতা শেষপর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে পারবেন, সেটি জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।